হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ – ১৯ জুলাই ২০১২) একাধারে ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাকে বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক বলে গন্য করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ কে বাংলা কথাসাহিত্যে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক মনে করা হয়। এছাড়াও তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র।
১
অসুন্দর মেয়েদেরও মাঝে মাঝে অপরূপ রূপবতী মনে হয়, যেমন গায়ে-হলুদের দিন। শুধু এই দিনটিতেই কোনো বিচিত্র কারণে তারা দেবীমূর্তির মত হয়ে যায়।
২
❝বউ মানেই তো কোমল একটা ব্যাপার। স্বপ্ন এবং কল্পনা মেশানো ছবি।❞
—হুমায়ূন আহমেদ (বাসর)
৩
“মেয়েরা বিয়ের আগে কোনো পুরুষকেই স্বামী ভেবে আনন্দ পায় না। প্রেমিককেও তারা বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বামী ভাবে না।”
—হুমায়ূন আহমেদ (কিছুক্ষণ)
৪
“গুণী মানুষের প্রেমে মেয়েরা যুগে যুগে পাগল হয়েছে। কারণ প্রকৃতির সেই পুরানো খেলা, প্রকৃতি চাচ্ছে পুরুষদের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে ‘ডি এন এ’ র মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি প্রাণপণে চাচ্ছে মানব সম্প্রদায়ের গুণগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায়। যেন প্রবাহিত হতে হতে এক সময় পূর্ণ বিকশিত হয়। তৈরি হয় অসাধারণ একটা মানব সম্প্রদায়।”
—হুমায়ূন আহমেদ (রুমালী)
৫
“ভাগ্য ফেরাবার জন্যে হলেও পুরুষ মানুষের বিয়ে দিতে হয়। কথায় আছে না স্ত্রীভাগ্যে ধন।”
৬
“বিয়ে করার জন্য দরকার হাসি খুশি ধরনের একটি মেয়ে, যে খুব রাগ করবে আবার পরমুহূর্তেই সবকিছু ভুলে হেসে ফেলবে। রাত ১ টার সময় ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে যার আপত্তি থাকবেনা।”
—হুমায়ূন আহমেদ (এইসব দিনরাত্রি)
৭
একজন বিবাহিত মেয়ে কোন দিনই কুমারী জীবনে ফিরে যেতে পারে না। কিন্ত কাছাকাছি হয়ত যাওয়া যায়। চেস্টা করলেই যাওয়া যায়। — হুমায়ূন আহমেদ
৮
নববিবাহিতা তরুণীরা বাবার বাড়িতে অযথা সময় নষ্ট করে না। এরা দ্রুত অতীত ভুলতে চেষ্টা করে। মেয়েরা তাদের শরীরে সন্তান ধারণ করে। সন্তান ধারণ করে বলেই হয়তো বা প্রকৃতি তাদের ভবিষ্যত্মুখী করে রাখে। অতীত তাদের কাছে পুরোনো গল্পের বইয়ের মতো। যে গল্প একবার পাঠ করা হয়েছে বলে কৌতুহল মরে গেছে। দ্বিতীয়বার পড়তে ইচ্ছে করে না। বইটি হারিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই!
৯
ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভাল। বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না। আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত বা ভালবাসাটা থাকে, শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়।
১০
যে মেয়ে স্বামীর আদর বেশি পায়, সে বাপের আদর কম পায়। আবার যে মেয়ে বাপের আদর বেশি পায়, তার ভাগ্যে স্বামীর আদর নেই।
—হুমায়ূন আহমেদ (লীলাবতী)
১১
বিবাহিত মেয়েদের সঙ্গে পুরনো প্রেমিকের দেখা হলে মেয়েরা চট করে রেগে যায়।
১২
❝বিয়ে কোন আনন্দময় ব্যাপার না। মোটামুটি ভাবে ভয়ংকর ব্যাপার। নিজের চেনা বিছানা ফেলে একজন পুরুষ মানুষের গায়ের ঘামের গন্ধের মাঝখানে শুয়ে থাকা – ভাবতেই গা গুলায়। ❞ —হুমায়ূন আহমেদ (রোদন ভরা এ বসন্তে)
১৩
মিথ্যা হলো শয়তানের বিয়ের মন্ত্র। মিথ্যা বললেই শয়তানের বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়া মানেই সন্তান-সন্ততি হওয়া। একটা মিথ্যার পর আরো অনেকগুলি মিথ্যা বলতে হয় এই কারণেই। পরের মিথ্যাগুলি শয়তানের সন্তান।
১৪
প্রেম করার জন্য মেয়েরা স্মার্ট ছেলে খুঁজে, বিয়ে করার জন্য পছন্দ করে শান্ত শিষ্টভদ্র ছেলে। সেই সব ভদ্র ছেলেদের পোশাক হবে পাজামা পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল। এরা হাঁটবে মাটির দিকে তাকিয়ে। হাসবে লাজুক ভঙ্গিতে।
নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।”
-ছায়বীথি; হুমায়ূন আহমেদ
১৫
“সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি প্রতিটি ছেলেমেয়েকে পাঁচটি অদৃশ্য নীলপদ্ম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এই নীলপদ্মগুলি হলো- প্রেম-ভালোবাসা। যেমন ধরো তুমি। তোমাকে পাঁচটি নীলপদ্ম দিয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত তুমি কাউকে পাওনি যাকে পদ্ম দিতে ইচ্ছে করেছে। কাজেই তুমি কারোর প্রেমে পড়োনি। আবার ধরো, একটা সতেরো বছরের তরুণীর সঙ্গে তোমার পরিচয় হলো। মেয়েটির তোমাকে এতই ভালো লাগলো যে, সে কোনো দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে তার সব ক’টি নীলপদ্ম তোমাকে দিয়ে দিল।তুমি পদ্মগুলি নিলে,কিন্তু তাকে গ্রহণ করলে না। পরে এই মেয়েটি কিন্তু আর কারও প্রেমে পড়তে পারবে না। সে হয়তো একসময় বিয়ে করবে, তার স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসার করবে, কিন্তু স্বামীর প্রতি প্রেম তার থাকবে না।”
-হিমুর হতে কয়েকটি নীলপদ্ম; হুমায়ূন আহমেদ