প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে না। সত্যিই কি তাই? প্রকৃতি তো অনবরত বিভিন্ন রহস্য সৃষ্টি করে চলেছে।
মিসির আলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের অস্থায়ী অধ্যাপক। এই ব্যাক্তির কাছে সকল কথার শেষ কথা হলো যুক্তি। উনি বিশ্বাস করেন কোন কিছুই যুক্তির ঊর্ধ্বে নয়। মিসির আলির পৃথিবীতে রহস্য এবং অলৌকিকতার কোন স্থান নেই। তবুও রহস্য তার পিছু ছাড়ে না।
মিসির আলি সিরিজের প্রথম বই ‘দেবী’। গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র রানু। আনিস সাহেবের নববিবাহিতা স্ত্রী। একা থাকলে বিচিত্র এক নারীকন্ঠ শুনতে পান তিনি। তখন চারদিক ভরে যায় চাঁপা ফুলের তীব্র গন্ধে। রানুর রয়েছে আশ্চর্য এক ক্ষমতা। সে যা স্বপ্ন দেখে, তাই সত্যি হয়। কীভাবে পেল সে এই ক্ষমতা? রানুর এই অস্বাভাবিক মানষিক পরিস্থিতি নিয়েই মিসির আলীর স্মরণাপন্ন হন আনিস সাহেব। বানুর ব্যাপারে খোঁজ নিতে মিসির যান রানুর গ্রামের বাড়ি। সেখানে গিয়ে আশ্চর্য কিছু তথ্য পান মিসির আলী। গ্রামের এক বিষ্ণু মন্দির থেকে আশ্চর্যজনকভাবে হারিয়ে গেছে মূর্তি। কোথায় গেল সেই মূর্তি। ছেলেবেলায় কী ঘটেছিল রানুর সাথে?
রানুদের বাসার মালিকের বড় মেয়ে নীলুফার। নীলু মিসির আলির ছাত্রি। পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক সুদর্শন যুবকের সাথে। কে এই যুবক? কী তার অভিপ্রায়?
১
মৃত্যুর সময় পাশে কেউ থাকবে না, এর চেয়ে ভয়াবহ বোধ হয় আর কিছুই নেই। শেষ বিদায় নেয়ার সময় অন্তত কোনো একজন মানুষকে বলে যাওয়া দরকার। নিঃসঙ্গ ঘর থেকে একা একা চলে যাওয়া যায় না, যাওয়া উচিত নয়। এটা হৃদ্য়হীন ব্যাপার।
২
অন্য এক ধরনের আনন্দ হচ্ছে। অন্য এক ধরনের সুখ। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এখন আর কেউ নেই। চারিদিকে সীমাহীন শূন্যতা।
৩
মানুষের সব শখ মেটা উচিত নয়। একটা কোন ডিসস্যাটিসফেকশন থাকা দরকার।’
‘কেন?’
‘তাহলে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। সব শখ মিটে গেলে বেঁচে থাকার প্রেরণা নষ্ট হয়ে যায়। যে সব মানুষের শখ মিটে গেছে, তারা খুব অসুখী মানুষ।’
৪
মানুষের স্বভাব হচ্ছে একবার ভয় পেলে সে ভয় পেতেই থাকে। ভয় পাওয়াটা তার জন্য ধারাবাহিক ব্যাপার হয়ে যায়।
৫
ইচ্ছা করেই তোমাকে আমি কম লিখি।তোমার চিঠি পড়ে-পড়ে খুব মায়া জন্মে যায়। এবয়সে আমার আর মায়া বাড়াতে ইচ্ছা করে না।মায়া বাড়ালেই কষ্ট পেতে হয়।
৬
সারা জীবন পাশাপাশি থেকেও এক সময় একজন অন্যজনকে চিনতে পারে না। আবার এমনও হয়, এক পলকের দেখায় একে অন্যকে চিনে ফেলে।
৭
কালো এবং অসুন্দরী মেয়েদের জেদ কখনো থাকে না। এদের জীবন কাটাতে হয় একাকী।
৮
অপ্রকৃতিস্থ মানুষের হাসি শুনতে ভালো লাগে না। গা ছমছম করে।
৯
মাঝেমধ্যে পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটে, যার কোনো ব্যাখ্যা থাকে না, শুধু অনুভবই করা যায়।
১০
নীলুর মনে হল একটি মেয়ে যেন নূপুর পায়ে দিয়ে তার চারপাশ দিয়ে ঘুরতে শুরু করেছে। ঘুরতে ঘুরতে এক বার মেয়েটি তাকে স্পর্শ করল, আর তক্ষুনি নীলুর মনে হল — আর কোনো ভয় নেই।
১১
মানুষের চেহারা দেখে কিছু অনুমান করা ঠিক না।
১২
যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ, অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক । কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়। আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেক বেশি খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারো ভালবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারো অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায় না।
১৩
অবিশ্বাসীরা বেশী ভয় পায়। কারণ বিশ্বাসীদের একজন প্রহরী থাকে, অদৃশ্য হলেও সে সাহস দেয়।
১৪
মানুষের বয়স হচ্ছে তার মনে। মন যতদিন কাঁচা থাকে, ততদিন মানুষের বয়স বাড়ে না।
১৫
কালো এবং অসুন্দরী মেয়েদের জেদ কখনো থাকে না। এদের জীবন কাটাতে হয় একাকী।