;
You are currently viewing প্রাচীন মিশরের ৭ টি চমকপ্রদ তথ্য

প্রাচীন মিশরের ৭ টি চমকপ্রদ তথ্য

ইতিহাসের পাতায় যতগুলো সভ্যতার নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে মিশরের স্থান সবচেয়ে উচুতেই থাকবে। ৩ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে, নীল নদের তীরে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ৪-৫ হাজার বছর আগে তৈরি স্থাপত্য এখনো আধুনিক যুগের মানুষদের অবাক করে।

আপনি যখন প্রাচীন মিশর সম্পর্কে চিন্তা করেন তখন আপনার মাথায় প্রথম যে জিনিসটি মাথায় আসে তা পিরামিড,স্ফিং, পেশীবহুল ফারাও এর মূর্তি কিংবাএবং রাণী ক্লিওপেট্রা। প্রাচীন মিশরীয়দের সম্পর্কে আরও অনেক জিনিস রয়েছে যা অনন্য কিন্তু মূলধারার সাহিত্যের অংশ নয়। আজ আপনাকে জানাতে যাচ্ছি প্রাচীন মিশরের ৭ টি আকর্ষণীয় তথ্য যা হয়তো আপনি আগে কখনোই শুনেন নি।

পেট মোটা ফেরাউন

প্রাচীন মিশরীয় কারুকার্য কিংবা ফেরাউন দের মূর্তি গুলোতে তাদের পেশীবহুল শক্তিশালী হিসেবে দেখানো হয়। বাস্তব সত্যি টা একদম অন্যরকম।প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা একটি সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, তাদের মতে ফেরাউনরা আসলে বেশি ওজনের ছিল এবং প্রায়শই স্থূল ছিল।

প্রাচীন মিশরে ফেরাউনদের সৃষ্টিকর্তা মানা হতো। তারা সবসময় জমকালো ভোজনবিলাসে ডুবে থাকতো, তারা কখনোই ব্যায়াম করতো না। আর তাদের খাবারগুলো বেশিরভাগই চিনিযুক্ত ছিল।

প্রাচীন মিশরীয় চিত্রকর্মগুলো ও মমি দেখে বোঝা যায় তারা সাধারণ পোশাকের পরিবর্তে সোজা ও শক্তধরণের পোশাক পড়তো। এই ধরনের পোশাক পড়ে তারা মুক্তভাবে শরীর নাড়াতেও পারতো না।

অতিরিক্ত ওজন ও ভোজনের কারণে তারা কমবেশি সকলেই ডায়বেটিস এ আক্রান্ত হতো।রাজা আমেন হোতেপ (দ্বিতীয়) এর সবচেয়ে ভালো একটি উদাহরণ; তিনি স্থূলতার কারণে মারা গিয়েছিলেন, যা ইঙ্গিত করে যে তার এথেরোস্ক্লেরোসিস ছিল। অথচ প্রাচীন মিশরীয় শিল্পীরা তার মূর্তিগুলি একটি শক্তিশালী, পেশীবহুল পুরুষকে চিত্রিত করেছে সেখানে স্থূলতার কোনো চিহ্ন নেই।

প্রাচীন মিশরের প্রিয় বিনোদন: মিশরীয় দাবা খেলা

প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে প্রাচীন মিশরীয় সাম্রাজ্য জুড়ে বোর্ড গেম খেলা হত। এই গেমগুলি খুব জনপ্রিয় ছিল এবং রয়্যালটি এবং সাধারণ লোকেরা একইভাবে উপভোগ করেছিল। এরকম একটি বোর্ড গেমকে “সেনেট” বলা হত।

Photo Credit: ChessBase

বেশিরভাগ লোকেরা এই খেলাকে দাবার সাথে তুলনা করবে যদি এটি খেলাটি একটি পাশা ঘুরিয়ে খেলা হযতো। কারণ এতে একাধিক ব্লক এবং বোর্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর সরানো টুকরা সহ একটি জটিল বোর্ড জড়িত ছিল। একমাত্র ক্যাচ ছিল যে টুকরোগুলি সরানোর জন্য একটি পাশা পাকানো হয়েছিল। গেমটি এত জনপ্রিয় এবং প্রিয় ছিল যে কিছু ফেরাউন তাদের সমাধিস্থলের ভিতরে গেমটিকে রাখতে বেছে নিয়েছিল।

আরো পড়ুন:  স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাচীন কালের কিছু জঘন্য পদ্ধতি

গ্রেট পিরামিডগুলি ক্রীতদাসদের কাজ ছিল না

পিরামিড নির্মাণের সাথে জড়িত বেশিরভাগ শ্রমিকদের বেতন হিসেবে অর্থ ও খাদ্য প্রদান করা হতো। ইতিহাস বই কিংবা প্রচলিত কথায় শোনা যায় তাদের জোর করে কাজ করানো হতো, এই ধরনের কথাবার্তা কেবল মিথ ছাড়া আর কিছুই না। শোনা যায় প্রাচীন মিশরে পেয়ার বড্ড বেশি দাম ছিল অনেক মিশরীয় মিরামিডে কাজের বদলে বেতন হিসেবে পেঁয়াজ ও নিতেন। এছাড়া পিরামিড নির্মান সেসময় বেশ গর্বের কাজ ছিল, কর্মীরা তাদের এই কাজ নিয়ে গর্ববোধ ও করতেন।

Photo credit: Pradeep Gopal

প্রাচীন মিশরের পিরামিডগুলি এতটাই বিস্ময়কর যে সারা বিশ্বের মানুষ এখনও তাদের দেখতে ভিড় জমায়। যদিও বেশিরভাগ লোক বিশ্বাস করে যে এই পিরামিডগুলি ক্রীতদাসদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল যাদেরকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল (অনেক মিশরবিদ অবশ্য অন্য কথাও বলেছেন)।

নারীও পুরুষ উভয়ই মেকআপ করতো

প্রাচীন মিশরে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার জীবনে অবশ্যই একটি বিশাল পার্থক্য ছিল। সমাজের প্রায় সবক্ষেত্রেই পুরুষ ও নারীর অবস্থানের মধ্যে অমিল ছিল, শুধুমাত্র একটি দিক ছাড়া। সেটি হচ্ছে মেকআপ! শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি প্রাচীন মিশরীয় নারী পুরুষ উভয়ই মেকআপ করতো। আমরা বর্তমান যে পৃথিবীতে বাস করি, এখানে পুরুষদের মেকআপকে নারীত্বের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়; যাইহোক,প্রাচীন মিশরীয় পুরুষদের তাদের মেকআপ রুটিন মহিলাদের সমানভাবে চিত্তাকর্ষক রাখতে দেখা গেছে।

Photo Credits: MakeUp

মেকআপ নিয়ে তাদের বিশ্বাস ছিল মেকআপ করলে দেবতারা তাদের আরো সুরক্ষিত রাখবেন এবং শক্তি প্রদান করবে। মেকআপ এর জন্য নারী পুরুষ উভয়ই মাস্কারা,মেহেদী সহ আরো বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য ব্যাবহার করতো। তারা সেসময় এগুলো ব্যবহার করার সময় নারী পুরুষ ব্যাপারগুলো মাথায় আনতো না। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো কেবল দেবতার সন্তুষ্টি অর্জন করে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

রাণী ক্লিওপেট্রা মিশরীয় ছিলেন না!

যদি কেউ প্রাচীন মিশর সম্পর্কে চিন্তা করেন, সম্ভাবনা রয়েছে যে তাদের মাথায় প্রথম পিরামিডের পরে কুখ্যাত রানী ক্লিওপেট্রার কথা মাথায় আসবে। মিশরীয় সাম্রাজ্যের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, ক্লিওপেট্রা মিশরীয় ছিলেন না! আদৌ তে তিনি ছিলে একজন গ্রীক এবং ধারণা করা হয় তিনি একটি সুসম্মানিত সামরিক বংশের অংশ ছিলেন যা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সময় ছিল।

আরো পড়ুন:  প্রাচীন মিশরের ৪ টি অদ্ভুত প্রথা; যা তখন স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হতো
Photo Credits: Biography

তার রক্তে গ্রীক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, ক্লিওপেট্রা মিশরের সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিলেন এবং মিশরীয় ভাষা শেখার জন্য টলেমাইক বংশের প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন। সম্ভবত মিশরীয় সংস্কৃতির এই আলিঙ্গনের কারণেই লোকেরা তাকে মিশরীয় হিসাবে যুক্ত করেছিল।

মিশরীয় নারীরা আপনার ধারণার চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করতো

প্রাচীন গ্রীক কিংবা রোমান সম্রাজ্যের দিকে তাকালে দেখা নারীরা অধিকাংশ সময়ই পুরুষদের দাসীবৃত্তি করেই কাটিয়েছে। প্রাচীন মিশর এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম বলা যায় বর্তমানের আধুনিক যুগের নারীদের চেয়েও সেসময় তারা বেশি স্বাধীনতা ও অধিকার পেয়েছিল।

Photo Credits: TheCollective

এই অধিকার গুলোর মধ্যে নারীর ডিভোর্স দেওয়া, উইল লেখা, কিংবা বিচারকের ভূমিকা পালন এমনকি ব্যবসার কথা ও রয়েছে।মিশরের নারীরা সাথে গ্রীক এবং রোমানদের তুলনায় অনেক ভালো ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে তারা কার্যত পুরুষদের সম্পত্তি ছিল। যাইহোক, মিশরে, তারা বিভিন্ন ধরণের অধিকার উপভোগ করেছিল, যার মধ্যে কিছু আধুনিক সময়ে মহিলাদেরও দেওয়া হয় না। এর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ, উইল লেখা, বিচারকদের অংশ হওয়া এবং আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার অধিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আজকের এই পৃথিবীতে নারী পুরুষদের আয় বৈষম্য মিটেনি এখনো। অথচ প্রাচীন মিশরে আজ থেকে ৩.৫ হাজার বছর আগে আয়ের মধ্যে সাম্যতা আনা হয়েছিল! পুরুষ ও নারী উভয় শ্রমের জন্য সমান মূল্য পেত।

রাজা তুতেনখামেনের ভাগ্য

রাজা তুতেনখামেন বা তুত ছিলেন মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত ফেরাউন দের মধ্যে একজন যার অল্প বয়সে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তুতেনখামেন মাত্র নয় বছর ফারাও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

Photo Credits: Inside Arabia

তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে এবং তা ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য। যাইহোক, মিশরবিদদের মধ্যে একটি দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে একটি জলহস্তী রাজা তুতেনখামেন মারাত্মকভাবে আহত করেছিল। এই ধারণার কারণ হচ্ছে তুতেনখামুনের মমির বুকে এমনই কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ কথা

ইতিহাসবিদদের মতে প্রাচীন মিশরীয়দের জীবন আজকের ইতিহাসের বই কিংবা টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয় তার চেয়েও অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক ছিল যা আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না।