You are currently viewing অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম: রূপকথার চরিত্র যখন অসুখ

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম: রূপকথার চরিত্র যখন অসুখ

১৮৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় লুইস ক্যারলের কালজয়ী ভিক্টোরিয়ান ক্লাসিক ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’। শিশুসাহিত্য হলেও এটি এতোটাই জনপ্রিয় হয় যে শিশুদের পাশাপাশাই তরুণ ও বৃদ্ধরাও এটি পছন্দ করতে শুরু করে। বইটির প্রধান চরিত্র অ্যালিসের কার্যকলাপ নিয়ে এমনি এক বিরল মানসিক ব্যাধি বা সিন্ড্রোম রয়েছে যার নামকরণ করা হয়েছে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম নামে। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম নাম ছাড়াও এটি এআইডব্লিউএস, টডস সিনড্রোম বা ডিসমেট্রোপসিয়া নামেও পরিচিত।

ভিক্টোরিয়ান যুগের শিশু সাহিত্যিক লুইস ক্যারল Image credit: Wikipedia

এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির সাময়িক সময়ের জন্য শারিরীক বিকারগ্রস্ত, দৃষ্টিভঙ্গি বিভ্রম ঘটে। এই সমস্যা স্থায়ী হয় অল্প সময়ের জন্য। এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে প্রকৃত আকারের তুলনায় বড় কিংবা ছোট ভাবতে থাকেন, কিংবা আশেপাশে থাকা বস্তুকে মনে করেন স্বাভাবিকের চেয়ে কাছে অথবা দূরে! এমনই সব বিভ্রান্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এই সিন্ড্রোমে ভুগতে থাকা ব্যক্তির মধ্যে। অনেক মৃগীরোগী কিংবরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা এমনটা অনুভব করেন। কেউ কেউ মনে করেন স্বয়ং লুইস ক্যারলেরও মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে এমন লক্ষণ অনুভব করেছেন। 

চলুন আজ আমরা এই বিরল সিন্ড্রোমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে জানি।

এই সিন্ড্রোমটি ব্রিটিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জন টড  আবিষ্কার করেছিলেন 

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোমটি প্রথম স্বীকৃতি পায় ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জন টডের এক গবেষণার মাধ্যমে। ডাঃ জন টড তিনটি মূল লক্ষণ দ্বারা এই সিন্ড্রোমকে শ্রেণীবদ্ধ করেন। যেগুলো কয়েক মিনিট থেকে পুরো একটি দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

১) ম্যাক্রোপসিয়া (বস্তুগুলিকে বাস্তবের চেয়ে বড় দেখায়)

২) টেলিওপসিয়া (যেখানে বস্তুকে বাস্তবের চেয়ে বেশি দূরে মনে হয়)

৩) মাইক্রোপসিয়া (যেখানে বস্তুগুলি বাস্তবের চেয়ে ছোট দেখায়)।

ডাঃ জন টড রোগীদের এই অবস্তাকে লুইস ক্যারলের শিশুদের রূপকথার গল্পের চরিত্র অ্যালিসের সাথে করেন। কারণ সেই গল্পের প্রেক্ষাপটের সাথে তার ভুক্তভোগী রোগীদের অনেক মিল রয়েছে। লুইস ক্যারলের গল্পে যেমন ছোট্ট অ্যালিস হাঁটতে হাঁটতে কোনো এক চমৎকার রূপকথার দেশে চলে যায় কিংবা মুহূর্তেই তা উধাও হয়ে যায় এমন হঠাৎ ছোট কিংবা বড় হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো খুবই সিমিলার।

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম শনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। ১৯৫০ এর দশক থেকে মেডিকেলের ইতিহাসে মাত্র ২০০ জনকে শনাক্ত করা গেছে। সময়ের সাথে সাথে এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যাক্তি মাইগ্রেন, মৃগীরোগ, স্ট্রোক এবং মাথার আঘাত সহ অন্যান্য শারিরীক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু চিকিৎসক অরার সাথেও তুলনা করেছেন।  

আরো পড়ুন:  টেস অব দ্য ডারবারভিলস: এক নিষ্পাপ নারীর করুণ পরিণতি

শারীরিক উপলব্ধি ও পরিবর্তন

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আক্রান্তদের উপলব্ধিগত অভিজ্ঞতার উপর এর প্রভাব। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করতে পারেন তার আশেপাশের সবকিছু পরিবর্তন হতে থাকে অথচ বাস্তবেই কেনো কিছুই হচ্ছে না আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কই বিভ্রম তৈরী করছে। তার মনে হতে পারে তার শরীর ছোট হয়ে যাচ্ছে কিংবা নিজেকে খুব বড় মনে হচ্ছে। আশেপাশের ঘরবাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে কিংবা অনেক দূরের মনে হচ্ছে কিংবা ঘরবাড়ি গুলোকে পুত লের ঘরের মতোই ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে।

আর এই বিশেষ উপসর্গটিই অ্যালিসের সাথে তুলনা করার প্ররোচনা দিয়েছে, যার শরীর পুরো গল্প জুড়ে সঙ্কুচিত এবং বৃদ্ধি পায়। অন্যরা রিপোর্ট করেছেন যে, সময় বা শব্দগুলি দ্রুত বা ধীর গতিতে চলতে দেখা যাচ্ছে, বা অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে এমন প্রাণী দেখতে পাচ্ছেন যা সেখানে নেই। কিছু ভুক্তভোগী তাদের সাথে একটি আয়না বহন করলে বাস্তবতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতাগুলি উপশম করতে পারে।

এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির এমন অভিজ্ঞতার কারণে মনে হতে পারে সে তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কিংবা তার মনে হতে পারে তার চারপাশের জগৎটি বাস্তব নয়। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোমে আক্রান্ত এমন অনুভব হলেও এর সাথে হ্যালুসিনেশন সমস্যার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম শিশুদের জন্য খুবই সাধারণ ঘটনা

শিশুরা কল্পনা করতে ভালোবাসে। তাদের আশেপাশের সবকিছুকেই তারা কার্টুন কিংবা গল্পের পৃথিবীর সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। গবেষণা বলছে এধরণের চিন্তা ৪ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শিশুদের মধ্যে এমনটা থাকা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। শিশুরা শৈশব থেকে কৈশোরে কিংবা যৌবনে প্রবেশ করার সাথে সাথে এই সিন্ড্রোমের লক্ষণগুলো হ্রাস পেতে থাকে। 

Mehadi Bhuiyan

Mehadi Bhuiyan holds a BA in English Literature from the National University of Bangladesh. His academic interests include literature, history, and cultural studies, with a particular focus on modern and contemporary writing. He works as a freelance writer, researcher, and editor, specializing in literary analysis, historical narratives, and cultural topics.

Leave a Reply